যৌন দ্বীপ – ২ | যৌন দ্বীপের জীবন যাপন

এই দ্বীপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশা ধীরে ধীরে কমতে লাগলো মনোজ আর জবার মনে, দিন থেকে সপ্তাহ, এর পড়ে মাস, অন্য আরেকটি মাস চলে যাচ্ছে। প্রায় ৫০ দিন হয়ে গেছে ওরা এই দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছে। জবা প্রতিটি দিন গুনে রাখছে। ওদের ভিতরের হতাশা ওরা নিজেদের ভিতরে লুকিয়ে রাখলো যেন অজয় বুঝতে না পারে। অজয়ের সামনে ওরা সব সময় বলতো যে, ওরা জানে, ওদের কে খুঁজতে অনেক লোক বের হয়ে গেছে, কিন্তু যেহেতু ওরা অনেক দূরে চলে এসেছে, তাই খুঁজে পেতে ওদের দেরি হচ্ছে, খুব শীঘ্রই ওরা এই দ্বীপের খোঁজ বের করে ফেলবে। এই সব আশা ব্যাঞ্জক কথা। জবা আর মনোজ জানে না যে অজয় ওদের এই সব কথা বিশ্বাস করে কি না, কারন অজয় খুব বুদ্ধিমান ছেলে আর এই দ্বীপে ওরা যেই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে সেই অবস্থা আর পরিস্থিত সম্পর্কে বুঝতে শিখে গেছে এখনই সে।

যতই সময় গড়াতে লাগলো জবার পক্ষে ওর এ আশাব্যাঞ্জক কথা চালিয়ে যাওয়া এবং ওরা আবার কোনদিন লোকালয়ে ফেরত যেতে পারবে এমন একটা ব্যবহার দেখানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে, ওর মন মেজাজ সব সময় তিরিক্ষি হয়ে যাচ্ছে। মনোজের সামনে মাঝে মাঝেই ওর এই বিরক্তি প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছিলো, যেটাকে মনোজ ও একটু ভয় পেতো। জবার সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারন ছিলো অজয়, ওর ছেলে। ছেলের মুখের দিকে তাকালেই একটা অব্যক্ত ব্যথা আর উপচে পড়া দুঃখের অনুভুতি যেন ওর গলা চেপে ধরতো। এই বয়সের একটা ছেলে যেভাবে নিজের জীবন কাটায় সেটা থেকে ওকে বঞ্চিত করে এই রুক্ষ আদিম জীবনে ওরা ওকে কিভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! ও কলেজ যেতে পারবে না, বন্ধুদের সাথে মিশে সময় কাটাতে, গল্প করতে, সিনেমা দেখতে, মজার মজার খাবার খেতে, কিছুই করতে পারবে না, এমন কি একটা মেয়েকে ও পাবে না যাকে সে বিয়ে করতে পারে, নিজের মনের ভালোবাসা উজার করে দিতে পারে, সেই মেয়ের ভালোবাসা নিজের মনে অনুভব করতে পারে।

সভ্য সমাজে আচার আচরন, কায়দা কানুন, কথা বলা, ভদ্রতা দেখানো, কারো উপকার করা, খারাপ মানুষ চিনা, কোন কিছুই ওর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাছাড়া ডাক্তার, ঔষূধ, হাসপাতাল ছাড়া এই আদিম পরিবেশে ওর জীবন দৈর্ঘ ও ছোট হয়ে যাবে, এসব কথা চিন্তা করলেই মন ভারী হয়ে উঠে, চোখের পানি আপনাতেই বেড়িয়ে যায়। আশার কথা শুনানোর পাশাপাশি জবা খেয়াল রাখছিলো যেন অজয় লেখা পড়া ভুলে না যায় আর নতুন নতুন কিছু শিখতে পারে। জবা নিজে যেহেতু শিক্ষিত, লেখা পড়া সে কলেজ পর্যন্ত পড়েছে, তাই সে নিজের হাতেই উঠিয়ে নিলো ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব। কিছু বইয়ের জ্ঞানের সাথে সাথে সামাজিক আচার, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, অঙ্ক, এসব ও শিখার প্রয়োজন ওর। মনোজ ওর স্ত্রীর এই সব কাজে মোটেই উৎসাহ দেয় না, ও মনে করে জবা শুধু শুধু ওর সময় নষ্ট করছে, ওদের ছেলের এখন উচিত, কিভাবে এই বন্য পরিবেশে একাকি দ্বীপে জীবন টিকিয়ে রাখা যায়, সেই শিক্ষা, হাতে কলমে।

কিভাবে মাছ ধরা যায়, কিভাবে ঘর বানানো যায়, কিভাবে শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়, এসব শিখা ওর জন্যে জরুরি। কারন এই প্রাকৃতিক বন্য বিপদ সঙ্কুল পরিবেশে ছোট একটা ভুলই মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে, তাই জীবন বাঁচিয়ে চলার শিক্ষাই ওর জন্যে বেশি দরকার। মনোজ চায় না যে ওর ছেলে বোকা, মেয়েলী দুর্বল ধরনের হয়ে বেড়ে উঠুক, কিন্তু দুখের বিষয় এই যে এই দ্বীপে আসার পর থেকে ছেলেকে সে সব সময় ওর মায়ের আঁচল ধরে পিছনে পিছনে চলতেই দেখেছে সে। এটা দেখে মনোজ ধরেই নিয়েছে যে জবা শুধু শুধু ওর সময় নষ্ট করছে, কিন্তু মনোজ ওদের এই পরস্পরের সাথে কথা বলা সময় কাটানোকে মেনে নিয়েছে, কারন এর ফলে হয়ত ওরা এই নির্জন দ্বীপে এই বন্য রুক্ষ কষ্টকর পরিবেশের কথা ভুলে যাবে, যার ফলে এখানে টিকে থাকার সংগ্রামে ওরা বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে পারবে। নয়ত মনের কষ্টে ওদের ভিতরে টিকে থাকার ইচ্ছেতাই হয়ত মরে যাবে। এছাড়া মা ছেলে এক সাথে গল্প করে সময় কাটালে ওদের মনের কষ্টটা ও দুর হবে। জবার সাথে ওর মনের একটা দূরত্ব তো আছেই, তাই ইচ্ছে করেই ওদেরকে বাধা দেয় না সে।

তবে জবা বুঝতে পারে মনোজের মনের কথা, তারপর ও সে মনোজকে রাজি করালো যে, দিনের মাঝের বেশ কয়েক ঘণ্টা জবা আর মনোজ একা সময় কাটাবে প্রতিদিন, জবা ওকে লেখা পড়া শিখাবে, সেই সময়ে মনোজ ওদেরকে মোটেই বিরক্ত করবে না, এছাড়া বাকি সময়টা মনোজ ছেলেকে নিয়ে কাজে ব্যাস্ত থাকতে পারে। মনোজ এই কথা শুনে খুশি হয় নি কিন্তু স্ত্রীর কথার বিপক্ষে তর্ক করে পরিবেশটাকে খারাপ করে দিতে ও ওর ইচ্ছে নেই। এতদিন জবা বলতো মনোজ নাকি বেশি জেদি। তবে এই দ্বীপে আসার পর থেকেই জবা ও যেন জেদি হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে, নিজের কথার বিপক্ষে কোন যুক্তি শুনতে চায় না সে মনোজের মুখ থেকে।

যেটুকু সময় মনোজ ছেলেকে পায়, তখন মাছ ধরা, জীব জন্তু, পাখি শিকার করা, এই গুলি শিখাতে লাগলো। অজয় খুব তাড়াতাড়ি শিখে নেয় যে কোন কিছু, কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে মনোজ বলে দিতে পারে যে এই সব কাজ ওর মোটেই পছন্দ না, এর চেয়ে বরং ওর মায়ের সাথে বসে লেখাপড়া করা বা কবিতা আবৃতি করতে পারলেই অজয় খুশি হবে। জবা চায় যে ছেলের সাথে কাটানো সময় গুলিতে ওকে মনোজ একদম বিরক্ত না করুক, আর ওদের মাঝে নির্জনতা থাকুক, সে জ্ঞান খাটিয়ে কি কি শিখানো হবে অজয়কে, সেটা ঠিক করলো। দ্বীপের যেই ঝর্নার কাছে ওদের বাড়ি, এর থেকে একটু দূরে অন্য আরেকটি বড় ঝর্না আছে, যার কথা আগেই বলা হয়েছে একটু দূরে, প্রায় ১ মাইলের মত দূরে, ঝর্নার সামনের জায়গাটা অনেকটা পুকুরের মত, চার পাশে পাথর, তিন দিক থেকে ঘেরা, শুধু সামনে সমুদ্রের দিকে খোলা, ওই জায়গাটাকেই জবা বেছে নিলো ওদের প্রতিদিনের শিক্ষার কাজের জন্যে।

মনোজকে সেই কথা জানিয়ে দেয়া হলো যেন ওই পথ দিয়ে ওই সময়ে সে না যায়। মাঝের এই বিরতিতে অঙ্ক, ইংরেজি আর পড়তে শিখার জ্ঞান ভুলে গেছে কি না অজয়, সেটা যাচাই করে নিতে লাগলো জবা আগে। ওদের ভাগ্য ভালো যে, ওই দ্বীপে ভেসে আসা জাহাজের সাথে কিছু বই পত্র ও ছিলো, সেগুলিই এখন জবা পড়াবে ছেলেকে, আর লেখার জন্যে বালুতটের চেয়ে সুন্দর জায়গা আর কোথায় পাবে ওরা। ওই সব বই ছাড়া ও ইতিহাস, জীবন, মানুষ, কবিতা, উপন্যাস, জীব বিচিত্র এই সব নিয়ে ও কথা বলতো জবা। অঙ্ক ও করাতো, তবে সব অঙ্ককে আগে নিজে মনে মনে সমাধান করে তবেই ছেলেকে শিখাতো। এমনকি মাঝে মাঝে ছেলেকে কিছু বাড়ির কাজ ও দিয়ে দিতো সে, যেটা ছেলে নিজে নিজে করে এনে দেখাবে মাকে।

লেখাপড়ার বাইরে ওদের এই মা ছেলের একত্র নির্জন সময় কাটানো মুহূর্ত গুলিকে ওরা দুজনেই ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ওর মায়ের পিছনে গিয়ে অজয় ওর মায়ের মাথার চুলে বিলি কেটে দিতো আর জবা সামনে প্রবাহমান সমুদ্রের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতো মিনিটের পর মিনিট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কত কথা যে ওদের মনে উদয় হতো সেই সময়টুকুতে, সেটা আমি হয়ত আপনাদেরকে বুঝাতে পারবো না। দুজনে মিলে সুর করে একত্রে কবিতা পড়তে বা গানের কলি ভাঁজতে ও পছন্দ করে। এছাড়া ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি, কোনটা নিয়েই না ওরা আলোচনা করতো না! শুধু একটা ব্যতিক্রম ছিলো সেটা হলো সেক্স।

এটা নিয়ে জবা মোটেই মুখ খুলতো না ছেলের কাছে। কখনও যদি ওদের কথার ভিতরে ওটা চলে আসতো তাহলে ও জবা খুব চালাকির সাথে কথাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতো। একটা বাড়ন্ত কিশোর ছেলের সাথে যৌনতা বা সেক্স নিয়ে কিভাবে সে আলাপ করবে, এটা ওর মাথায় আসতো না। কিন্তু সে জানে যে ওদের কথা ওদিকেই যাবেই, কোন না কোনদিন। ও নিজে কাউকে সেক্স বা যৌনতা নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে, এটা বলার মত যোগ্যতা ওর নেই বলেই মনে করে সে। জবা চাইতো যে এইসব ব্যাপারে ছেলেকে ওর বাবাই জ্ঞান দিক। সে মনোজকে কয়েকবার বলেছে ও, কিন্তু মনোজ রাজি না ছেলের সাথে এইসব নিয়ে কথা বলতে।

হঠাতই একদিন যৌনতার প্রশ্ন এসে গেলো ওর কাছে, আচমকা, কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই। অজয় ওর মায়ের মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো মায়ের পিছনে বসে একটা পাথরের উপরে, জবা নিচে বালুর উপরে, “মা, আমি তোমাদেরকে কাল রাতে দেখেছি…”
“আমদেরকে দেখেছো?”-জবা জানতে চাইলো।
“হুম, তোমাকে আর বাবাকে বিছানার উপরে…”
জবার গাল চোখে মুখ লালাভ হয়ে উঠলো, লজ্জায় ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না, ওর শরীর যেন কাঁপছিলো, ছেলে কি নিয়ে কথা বলছে সেটা বুঝতে পারলো সে। অবশেষে অনেকদিন পড়ে গতকাল রাতে ওদের দুজনের মধ্যে সেক্স হয়েছে, যদি ও খুব বেশি একাকী সময় পায় নি ওরা, বিশেষ করে অনেকদিন পড়ে মনোজের ছোঁয়া পেয়ে যেন পাগল হয়ে উঠেছিলো জবা, ছেলে দেখে ফেলেছে সেটা, “আমদেরকে লুকিয়ে দেখা তোমার উচিত না অজয়? কেন এমন করলে তুমি?”-জবা বেশ রেগে গেলো ছেলের উপর যদি ও রাগার মত কোন কাজই সে করে নি।

“আমি লুকিয়ে দেখি নি তোমাদেরকে, তোমাদের বিছানা আর আমার বিছানা তো পাশেই, আমি ইচ্ছে করে দেখি নি…”-অজয় ওর পক্ষে যুক্তি দিলো।
জবা জানে যে ছেলে সত্য কথা বলছে, ও আর মনোজ ও জানতো যে এটা খুব রিস্ক হয়ে যাচ্ছে ওদের জন্যে, কিন্তু জবা ওর শরীরের ক্ষিধেকে কোনভাবেই সামলাতে পারছিলো না। জবা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না, চুপ করে রইলো সে, তখনই ছেলের পরের কথাতে সে আরও বেশি অবাক হলো।
“আমি কি কোনদিন এই রকম কোন মেয়ের সাথে করতে পারবো, মা?”-অজয়ের চোখের দৃষ্টি ও সমুদ্রের দিকে, “মানে, আমি কোনদিন কোন মেয়েকে ছুয়ে ও দেখি নি, কাউকে চুমু খাই নি, কিভাবে কি করে, কিছুই জানি না…আমি …আমি…”-বাকি কথাগুলি আর বের হলো না অজয়ের মুখ দিয়ে ওর চোখের কোনে চিকচিকে অশ্রুর কনা দেখা দিলো, জবা মাথা ঘুরিয়ে ছেলের দিকে তাকালো, ছেলের কথা ওর মনে ও যেন কষ্টের এক পাথর নিক্ষেপ করলো, ওর নিজের চোখটা ও কেন যে সব সময় ভিজে উঠে অল্পতেই, জানে না সে।

“অবশ্যই তুই করবি বাবা, কারন আমরা এখান থেকে উদ্ধার পাবো বাবা, উদ্ধার পাবো…”- এক বুক কষ্ট নিয়ে ও ছেলেকে মিথ্যে আশা দিতে ভুললো না জবা। কোনভাবেই ছেলের আশাকে সে মরে যেতে দিতে পারে না।
“কেন মিথ্যে বলছো মা, এই রকম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, কেউ আমাদেরকে খুঁজতে আসবে না, আমরা চিরদিনের জন্যেই এখানে আটকা পড়েছি, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত, কোন আশা নেই…আমরা পুরো একাকী, এভাবেই একাকী বাকি জীবনটা পার করতে হবে আমাদেরকে”-একটু থেমে অজয় আবার বললো, “কিন্তু বাবার জন্যে তো তুমি আছো, আমার জন্যে কেউ নেই…”-অজয়ের চোখের পাশ দিয়ে পানির ফোঁটাকে গড়িয়ে পড়তে দেখলো জবা, ওর কাছে মনে হলো, কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিয়ে ওর বুকের পাঁজরগুলিকে একটি একটি করে ভাঙছে ওর চোখের সামনে। সোজা হয়ে দাড়িয়ে অজয়কে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো জবা, “আমি খুব দুঃখিত বাবা, আমি জানি, এই কঠিন সময়টা আমার আর তোর বাবার জন্যে যতটা না কঠিন, তোর জন্যে আরও অনেক বেশি কঠিন, কিন্তু আমরা তো আশা ছাড়তে পারি না সোনা, আমাদের উদ্ধার পাবার আশা করতেই হবে, আমাদেরকে যে ভবিষ্যতের আশা করতেই হবে রে, সোনা…”-জবার গলা ও ধরে এলো।

“কিসের ভবিষ্যৎ?”-যেন ধনুকের চিল্কা থেকে একটা তীর সজোরে বের হয়ে গেলো, লাফ দিয়ে দাড়িয়ে মাটিতে থুথু নিক্ষেপ করে রাগী স্বরে বলে উঠলো অজয়, “কোন কচুর ভবিষ্যৎ? আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই মা, আর এই জন্যে দায়ী আব্বু, আমি উনাকে ঘৃণা করি”-এই বলে ওর মায়ের দিকে পিছন দিয়ে অজয় সমুদ্রের দিকে ঘুরে গেলো, রাগে ওর শরীর কাঁপছে। পিছন থেকে জবা ওকে জরিয়ে ধরলো আবার ও। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে থাকলো অজয় চেষ্টা করছিলো ওর ভিতরের রাগকে কমাতে, ওর আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে। সে ছোট হলে ও বুঝতে পারে যে, এই বিদেশ যাত্রা ওর আম্মুর ইচ্ছাতেই হয় নি, ওর আম্মুর সায় ও ছিলো না, শুধু ওর আব্বুর জেদ আর উনার নিজের উন্নতির জন্যে ওদেরকে দেশ ছেড়ে আপন মানুষদের ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার জন্যে পথে নামতে হয়েছে, আর এখন? এখন কোথায় ওরা?

অজয় ওর গলা নরম করলো আর মৃদু স্বরে বললো, “আমি দুঃখিত মা, আমার তোমাকে দোষ দেয়া উচিত না, আমি বাবাকে ও ঘৃণা না করার জন্যে চেষ্টা করি, কিন্তু…কিন্তু আমি বড় হচ্ছি, আর আমার ভিতরে আবেগ আমাকে একেক সময় এমন পাগল করে তোলে, মনে হয় আমার জীবন যেন সমুদের পানিতে ধীরে ধীরে ধুয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, আমি এক অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি…”
“আমি জানি সোনা, আমি জানি…আমি বুঝি…”-জবা পিছন থেকেই ছেলের গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো।
“আমার শুধু…আবেগ…মানে ভিতরে একটা অনুভুতি আমাকে চেপে ধরে, আমার ভিতরের কোন একটা অনুভুতি…আমি জানি না আমি কি করবো, আমার শরীর পরিবর্তন হচ্ছে, আমি শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি আমার ভিতরে, আমার মনে হয় আমি পিছিয়ে পড়ছি বার বার, ওই অনুভুতিগুলি এলেই আমি আমার মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, অন্য কথা ভাবা চেষ্টা করি…কিন্তু কাল রাতে তোমাকে আর আব্বুকে দেখে, আমার যে কেমন লাগছিলো, আমি বলতে পারবো না, আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো আমি যেন সাগরে গিয়ে ঝাঁপ দেই, আমি জানি তোমরা সেক্স করছিলে, কিন্তু ওই শব্দটা ছাড়া আমি ওই ব্যাপারে আর কিছুই জানি না। আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, জানতে চেয়েছিলাম সকালে, উনি শুধু আমার উপর রেগে গিয়ে চিল্লাতে শুরু করলো, যে আমার এখন শুধু কিভাবে বেঁচে থাকা যায়, সেই চিন্তা করা উচিত, অন্য কোন কথা চিন্তা করা উচিত না…কিন্তু শুধু বেঁচে থেকে কি করবো আমি, আমার তো কোন ভবিস্যতই নেই…কোন কারনে বাঁচবো আমি, বলো?”

ছেলে কি বুঝাতে চাইছে, সেটা জবা বুঝতে পারে, ও ভিতরে ভিতরে খুব সঙ্কুচিত হয়ে থাকে এই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে, “আমার কারনে বাঁচবি তুই, আমার কারনে, এই দ্বীপে তোকে হারালে যে আমি নিজেই আর একটি মুহূর্ত ও বেঁচে থাকবো না রে সোনা। তবে…আসলে,… আমি জানি না এই সব নিয়ে কিভাবে কথা বলতে হয়, বাবা, আমি সত্যিই জানি না,”-জবার গলা খুব দুর্বল শুনাচ্ছিলো, “তোর আব্বুই আমার জীবনের একমাত্র যৌন সঙ্গী, আর আমি যখন বড় হয়েছি, কেউ আমাকে কোনদিন এই ব্যাপারে কিছু শিখায় নি, বা আমার অনুভুতি নিয়ে ও আমি কারো সাথে কথা বলতে পারি নি। এর আগেই আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
“বাবা, আমার কথার উত্তর দিবে না, তুমি ও আমার সাথে এটা নিয়ে কথা বলবে না, তাহলে আমি কার কাছে জানতে চাইবো, এই পাখিদের কাছে, নাকি সমুদ্রের মাছেদের কাছে?”-অজয়ের গলায় স্পষ্ট অভিমান, আর ওর অভিমান যে কত তীব্র সেটা ওর মায়ের চেয়ে ভালো আর কে জানে। জবা জানে যে অজয় সব দিক দিয়েই ওর মতো, শুধু এই একটা দিক সে পেয়ে গেছে ওর বাবার থেকে, সেটা হলো রাগ, জেদ, অভিমান।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.